সূরা কুরাইশ

অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা - কুরআন ও হাদিস শিক্ষা | | NCTB BOOK

সূরা কুরাইশ হলো মক্কি সূরা। এর আয়াত সংখ্যা চারটি। এটি আল-কুরআনের ১০৬তম সূরা। এ সূরায় মক্কা নগরীর কুরাইশদের কথা বর্ণনা করা হয়েছে । এজন্য এর নাম রাখা হয়েছে সূরা কুরাইশ ।

শানে নুযুল
পবিত্র কাবাগৃহ মক্কা নগরীতে অবস্থিত। এ গৃহের রক্ষণাবেক্ষণ ও সেবার দায়িত্ব ছিল কুরাইশ সম্প্রদায়ের উপর। এজন্য কুরাইশগণ বহু সুযোগ সুবিধা লাভ করত। লোকজন তাদের সম্মান করত। তাদের নেতৃত্ব মেনে চলত। তাদের প্রতি কোনোরূপ অন্যায়-অত্যাচার করার সাহস পেত না। এ সুযোগে তারা সিরিয়া, ইয়ামান প্রভৃতি দেশে ব্যবসায়-বাণিজ্য করত। চোর-ডাকাত, ছিনতাইকারীরা তাদের বাধা দিত না। এমনকি শীত-গ্রীষ্মের প্রতিকূল পরিবেশেও তারা সকলের সহযোগিতায় নির্বিঘ্নে ব্যবসায়-বাণিজ্য করতে পারত। তাছাড়া হজ উপলক্ষে বিপুল লোকজন মক্কা নগরীতে আসত, এতে কুরাইশগণ বহু অর্থ-সম্পদ লাভ করত। কুরাইশদের এসব মানসম্মান ও ধন-সম্পদ ছিল মূলত কাবা গৃহের বদৌলতে। সুতরাং তাদের উচিত ছিল এ গৃহের প্রভুকে মেনে চলা। অথচ তারা তা করত না। বরং তারা ছিল মুশরিক । তারা মূর্তিপূজা করত। আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস করত না। রিসালাত ও আখিরাতেও তারা বিশ্বাস করত না। এমনকি রাসুলুল্লাহ (স.) যখন ইসলামের দাওয়াত শুরু করলেন তখনো তারা তাঁর বিরোধিতা করতে লাগল। এ জঘন্য ও অনৈতিক আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তায়ালা এ সূরা নাজিল করে তাদের সতর্ক করে দেন।

অনুবাদ

بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ

দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে।

لا يُلفِ قريش 

১. যেহেতু কুরাইশের আসক্তি রয়েছে।

الفِهِمْ رِحْلةَ الشَّتَاءِ وَالصَّيْفِ 

২. আসক্তি রয়েছে তাদের শীত ও গ্রীষ্মে সফরের।

فَلْيَعْبُدُوا رَبَّ هَذَا الْبَيِّت

৩. অতএব, তারা এ ঘরের মালিকের ইবাদত করুক।

الَّذِي أَطْعَمَهُم مِّنْ جُوعٍ، وَأَمَنَهُمْ مِنْ خَوْفٍ

৪ . যিনি তাদের ক্ষুধায় আহার দিয়েছেন আর তাদের নিরাপদ করেছেন ভয়-ভীতি থেকে।

ব্যাখ্যা
এ সূরায় কুরাইশদের নানা নিয়ামতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অতঃপর এসব নিয়ামতের পরিবর্তে তাদের কী করা উচিত এ সম্পর্কে দিক-নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

মক্কা নগরীতে কাবা গৃহ অবস্থিত। কাবা হলো আল্লাহর ঘর। এ জন্য আল্লাহ তায়ালা মক্কার কুরাইশদের নানা সুবিধা প্রদান করেন। তিনি তাদের সম্মান, মর্যাদা ও নিরাপত্তা দান করেন। ক্ষুধা তৃষ্ণায় খাদ্য, পানীয় দান করেন । সুতরাং তাদের কর্তব্য হলো এসব নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা। যে ঘরের বদৌলতে তারা এসব লাভ করলো সে ঘরের মালিকের ইবাদত করা । কেননা তিনিই তাদের এসব দান করেছেন।

শিক্ষা : এ সূরার শিক্ষা নিম্নরূপ:
■ আল্লাহ তায়ালা আমাদের খাদ্য-পানীয় ও নিরাপত্তা দান করেন।
■ তিনি সকল নিয়ামতের মালিক।
■ সকলেরই উচিত তাঁর ইবাদত করা।

অতএব, আমরা সবসময় আল্লাহর ইবাদত করব। তাঁর প্রদত্ত নিয়ামতের জন্য তাঁর শুকরিয়া আদায় করব। তাহলে তিনি আমাদের প্রতি নিয়ামত আরও বাড়িয়ে দেবেন।

কাজ : সূরা কুরাইশের তিনটি শিক্ষা শিক্ষার্থীরা খাতায় লিখবে ও শিক্ষককে দেখাবে।
Content added || updated By
Promotion